কবুতর পালনের প্রাথমিক ধারণা: আর্টিকেল লেখক (আব্দুর রাজ্জাক)
প্রাথমিক কথা: ইটালির ভেনিস শহরের সান মার্কো চত্তরকে পৃথিবীর বিখ্যাত কবুতর চত্তর বলে। সেখানে হাজার হাজার কবুতর পযর্টদের স্বাগত জানায়। যুগে যুগে পৃথিবীর অনেক কিছুই পাল্টেছে। কিন্তু প্রাণীকুল খুব বেশি পাল্টায় নি। তারা তাদের স্ব স্ব বৈশিষ্ট নিয়ে আজও অস্তিত্ব ধরে রেখেছে। আর সব প্রাণীদের মতো কুবতরও দুরন্তপনা করে। তারমধ্যেই তারা মানুষের পোষ মেনে থাকে।
পরিচিতি: পৃথিবীতে অনেক আগে থেকেই কবুতর বিশস্ততার পরিচয় দিয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে তারা ভূমিকা রেখেছে। পুরনো দিনে এদের ব্যবহার করা হতো চিঠি আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে। যা উঠে এসেছে বিভিন্ন গল্প উপন্যাস ও সিনেমায়। এরাই সবচে বেশি সাহসী প্রাণী। এদের রয়েছে বিশেষ কম্পাস। বিজ্ঞান জেনেছে-কবুতরের মস্তিস্কে ৫০টি সেল বা কোষ রয়েছে। এসবের কারণেই এরা মেন্টাল ম্যাপ মেনে চলতে পারে। এদের ব্রেইন, দৃষ্টি বা সেল খুবই সক্রিয়। এদের দম বেশি থাকে। উড়তে পারে অনেক দূর পর্যন্ত। যা মুগ্ধ করে যে কোন মানুষকে। এজন্য এদের নিয়ে কবুতরের রেইস বা দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। বহুমুখী গুণে গুণান্বিত পাখি কবুতর। যাদের কারণে অনেক বেকার স্বাবলম্বী হয়েছেন। যার মাংস মানুষের আমিষের চাহিদার অনেকাংশে পুরণ করে। সখের বসেও অনেকে কবুতর পালন করেন।
কবুতরের প্রকারভেদ: জানা যায়,বিশ্বব্যাপী ১২০ প্রজাতির কবুতর রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৩০ জাতের কবুতর রয়েছে। যেমন-কিং (সাদা, খয়েরি,কাল), কেরিয়ার হোমার, রেচার হোমার, বিউটি হোমার, বোখারা (লোমে ফেস ঢাকা থাকে), পটার (রেড, ব্লু, ব্ল্যাক), হেনা পটার, ড্রাগন রোলার, গিয়ার, মডেনা, লাক্ষা, ভিক্টোরিয়া, স্ট্রেচার (ইয়েলো, ব্লু, রেড), রান, মনভেন, তামলা, গিরিবাজ, গোলা, সিরাজী (খয়েরি, সিলবার, সাদা), ফর্ক টেইল ট্রামপেটার, বোম্বে, চাইনা, ভিয়েনা শর্ট ফেস, ডাউন ফেস, বার্লিন শর্ট ফেস, লং ফেস টামব্লার, জার্মান মেগপাই ক্রপার, হেলমেট, টাগানরগ টামব্লার, সাটিং, গিয়া চুন্নী, মালটে, জেকোভিন বা লায়ন পিজিয়ন, রান, গিলবেক। দেশীয় জাতের মধ্যে জালালি, বাংলা, লোটন উল্লেখযোগ্য।
কিভাবে পালন করবেন: পৃথিবীতে একমাত্র পাখি কবুতর যে নিজেই নিজেকে চিনতে পারে। প্রত্যেকটি আলফাবেটকে আলাদা আলাদাভাবে সে চিনতে পারে। আলাদা আলাদা ছবিও সে চিনতে পারে। তারা অন্যতম এক সামাজিক প্রাণী। তারা দলবেধে থাকতে পছন্দ করে। জোড়ায় জোড়ায় থাকতে পছন্দ করে। তারা সমানভাবে দায়িত্ব নেয়। বাবা ও মা বাচ্চার দায়িত্ব সমানভাবে নেয়। শুধু কম্পাস ম্যাপ তৈরী করাই নয় নিজেরাই ম্যাপ বা পজিশন তৈরী করতে পারে। কারণ কবুতরের মাথায় একটি ম্যাপ থাকে। যা থেকে পরে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস সিস্টেম তৈরী হয়। তাই কবুতর পালনের আগে এর বিভিন্ন দিক জেনে নিতে হবে। যেমন:
কবুতরের জীবনচক্র: একটি কবুতর ৫ থেকে ৬ মাস লাগে বড় বা প্রাপ্ত বয়স্ক হতে। স্বাভাবিক আকৃতির একটি কবুতর ৪শ গ্রাম বা ৫শ গ্রাম পর্যন্ত বড় হয়। মুরগির মতো কবুতরও ডিম দেয়। কবুতরের থলিতে দুটি ডিম দেয়ার অবস্থা তৈরী হয়। একটি ডিম দেয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দ্বিতীয় দিম দেয়। পরে তারা মা বাবা সমানভাবে তা দেয়। মা কবুতর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত তা দেয়। আর বাবা সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ডিমে তাপ দেয়। একটি কবুতর ডিম দেয়ার পর, বাচ্চা দেবে কিনা তা জানা যায়।
সাধারনত: ডিমকে ৫ দিন তা দেয়ার পর, আলোতে নিয়ে তা জানা যায়। ডিমটি স্বচ্ছ থাকলে নিষিক্ত হয়নি। আর অস্বচ্ছ বা ব্লাড নালি থাকলে বাচ্চা দেবে বলেও ধরে নেয়া হয়। সাধারণত ডিম পাড়ার ১৮ দিন পরই বাচ্চা ফুটে। বাচ্চাটা সাথে সাথে বড় হরে থাকে তবে আরো ৩দিন সময় লাগে বাচ্চা হতে। বাচ্চা ফুটার ৪ দিন পর চোখ ফুটে। বাচ্চা ফুটার পর প্রতিদিন দিগুণ হারে বড় হয়। ১০-১২ দিন পর পালক গজায়। ২৮ দিন পর খাওয়ার উপযোগী হয়। পরে আবার প্রাপ্ত বয়স্ক হতে ৫-৬ মাস লাগে।
একটি কবুতর ধরে নেয়া যায়, ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। যতদিন সুস্থ্য থাকে ততদিন ডিম দেয়। বলা হয়ে থাকে, ভাল জাতের একজোড়া কবুতর ১২ মাসে ১৩ জোড়া ডিম দেয়। এজন্য টেকনিক গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন-ডিম দেয়ার পর ভাল জাতের কবুতর থেকে অন্য কম জাতের কবুতরের নিচে ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটানো যায়।
বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন: প্রথমে সখের বসে কবুতর পালন শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়ায় তা বাণিজ্যিকভাবে পালন শুরু হয়। এখন বাংলাদেশে ৫ লাখ টাকার জোড়াও আছে। যেমন-ভিক্টোরিয়া ক্রাউন। আবার ৫শ’ টাকা জোড়াও আছে। তবে বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর পালনের জন্য বেশ কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
এজন্য কবুতরের বিভিন্ন বিষয়ে জানতে হবে। জেনে শুনে তারপর শুরু করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন বই, ইন্টারনেট বা যারা এ নিয়ে কাজ করছে অথবা লালন-পালন করছে তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে শুরু করা যেতে পারে।
0 comments: